এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় কী তা কেমন করে কাজে লাগাবেন
বুঝতে পারছেন না। তাহলে আজকের আর্টিকেল্টি আপনার জন্য। কেননা আজকের আর্টিকেলটিতে
জেনে জাবেন কিভাবে এলার্জি নিয়ন্ত্রে কাজে লাগাতে হয় সে সম্পকে বিস্তারিত আলোচনা
করা হবে।
নিচে আপনার জন্য কিভাবে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় সুস্থ থাকবেন সে
বিষয় নিয়ে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে। সেখান থেকে আপনি খুব সহজে এলার্জি থেকে
মুক্তি পাবেন সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই দেরি না করে আর্টিকেলটি পড়তে
পারেন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ এলার্জি নিয়ন্ত্রন রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়
- এলার্জি কী এবং এর প্রধান কারন
- ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রন কেনো গুরুত্বপূর্ণ
- লেবু ও গরম পানির থেরাপি এলার্জির সময়
- ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
- ঠান্ডা এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
- কালোজিরা ও মধু মিশ্রন এলার্জি প্রতিরোধ
- মৌসুমি এলার্জি মোকাবিলার ঘরোয়া টিপস
- এলার্জি নিয়ন্ত্রণে ভেষজ তেলের ব্যবহার
- ঘরোয়া উপায়ে চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
- লেখকের শেষ কিছু কথা এলার্জি নিয়ে
এলার্জি কী এবং এর প্রধান কারণ
এলার্জি কি এবং এর প্রধান কারন হলো এমন এক ধরনের শারীরিক প্রতিক্রিয়া যেখানে
আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিছু নির্দিষ্ট পদার্থকে ক্ষতিকর ভেবে
অতিরিক্ত সাড়া দেয়। সাধারণভাবে এসব পদার্থকে অ্যালার্জেন বলা হয়,
যা আমাদের জন্য সবসময় ক্ষতিকর নয়, কিন্তু সংবেদনশীল ব্যক্তির দেহে তা হঠাৎ
করে নানান সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন ধুলাবালি, পরাগরেণ, নির্দিষ্ট খাবার, পশুর
লোম, ওষুধ কিংবা তীব্র গন্ধ অনেকের জন্য এলার্জি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এলার্জি
হলে নাক দিয়ে পানি পড়া,হাঁচি, চোখ চুলকানো ত্বকে লাল দাগ, চুলকানি বা
শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
এলার্জির প্রধান কারন হলো দেহের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। ইমিউন
হলো প্রতিরোধ ক্ষমতা বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সহজভাবে বললে আমাদের শরীরের
ভেতরে এক বিশেষ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে যেটি জীবাণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া,
যেকোনো ক্ষতিকর উপাদান থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা
ব্যাবস্থাকেই ইমিউন সিস্টেম বলা হয়, আর এর কার্যক্ষমতাকেই বলা হয় ইমিউনিটি।
স্বাভাবিক অবস্থায় ইমিউন সিস্টেম জীবাণু বা ক্ষতিকর উপাদান থেকে আমাদের দেহকে
সুরক্ষা দেয়। কিন্তু এলার্জির ক্ষেত্রে ইমিউন সিস্টেম নির্দোষ পদার্থ নিংসরণ
করে।
এই হিস্টামিনই শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, চুলকানি বা ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ তৈরি করে।
বংশগত কারনেও এলার্জির একটি বড় উৎস। এছাড়া দূষণ, অতিরিক্ত ধুলাবালি, ধূমপান,
কেমিক্যাল যুক্ত খাবার, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ এলার্জি বাড়িয়ে দেয়।
সুতরাং, এলার্জি মূলত দেহের অস্বাভাবিক প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ার ফল এবং এর পেছনে
পরিবেশগত ও জেনেটিক উভয় কারনেই কাজ করে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, খাবার বাছাইয়ে
সতর্ক হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা
পালন করে।
ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রন কেনো গুরুত্বপূর্ন
ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রন এর বিশেষ সুবিধা হলো এগুলো প্রায় সবাই ব্যবহার
করতে পারে এবং খরচেও কম হয়। সাধারনত এলার্জি নিয়ন্ত্রণে অ্যান্টিহিস্টামিন বা
অন্যান্য ঔষুধ ব্যবহার করা হয়, যা দ্রুত আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদে
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঝুঁকি তৈরু করে। অন্যদিকে ঘরোয়া উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রণ
করলে শরীর স্বাভাবিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং স্থায়ীভাবে স্বস্তি পাওয়া যায়।
যেমন আদা, মধু, লেবু, কালোজিরা , হলুদ, তুলসীপাতা কিংবা রসুনের মতো প্রাকৃতিক
উপাদান শরীরকে ভেতর থেকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
এসব উপাদান নিয়মিত ব্যবহারে শ্বাসকষ্ট, হাঁচি, চুলকানি বা চোখ জ্বালার মতো
উপস্ররগ অনেকটা কমে যায়। তাই ঘরোয়া চিকিৎসা কেবল সাময়িক আরামি দেয় না বরং
দীর্ঘমেয়াদে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা নিশ্চিত করে।সব মিলিয়ে বলা যায়, ঘরোয়া
উপায়ে এলার্জি নিয়ন্ত্রন করা শুধু নিরাপদ ও কার্যকর নয়,বরং এটি পাকৃতিক ভাবে
সুস্থ থাকার অন্যতম সেরা উপায়। তাই আমাদের সকলকেই এলার্জি নিয়ন্ত্রন রাখার
প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় জানতে হবে।
লেবু ও গরম পানির থেরাপি এলার্জির সময়
লেবু ও গরম পানির থেরাপি এরার্জির সময় একটি প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া উপায় হিসেবে বেশ
কার্যকর হতে পারে। এলার্জির কারণে শরীরে জমে থাকা ইমিউন সিস্টেমের দুর্বলতা
কমানোর জন্য গরম পানি শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। অন্যদিকে
লেবুতে ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে,
যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রাড়াতে সহায়তা করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক
গ্লাস গরম পানির সাথে আধা লেবুর রস মিশিয়ে খেলে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং এলার্জি
সৃষ্টিকারী পদার্থগুলো ধীরে ধীরে শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া এই থেরাপি শ্বাসকষ্ট, হাঁচি নাক বন্ধের মতো সাধারণ এলার্জির উপসর্গ
কমাতেও উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে। তবে কারও যদি এসিডিটি, গ্যাস্ট্রীক বা লেবুতে
অ্যালার্জি থাকে, তাহলে এ থেরাপি গ্রহনের আগে আপনাকে অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন
এলার্জির সময় লেবু ও গরম পানির থেরাপি শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। গরম পানি
শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে হজম শক্তি বাড়ায়। তাই আপনাদের যাদের এলার্জির
সমস্যা আছে আপনারা সবাই লেবু ও গরম পানির থেরাপি নিয়ে এলার্জির সমস্যা থেকে
মুক্তি পেতে পারেন।
ত্বকের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
ত্বকের এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা, যা চুলকানি, লালচে ভাব, ফুসকুড়ি বা
জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। অনেক সময় ধুলোবালি, রোদ, খাদ্য, বা রাসায়ণিক
পদার্থের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। এলার্জি হলে প্রথমেই আক্রান্ত স্থান
পরিষ্কার রাখা জরুরি। গরম পানির পরিবর্তে কুসুম গরম বা ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে
ফেললে চুলকানি ও লালভাব কিছুটা কমে যায়। অ্যালোভেরা জেল একটি অত্যন্ত কার্যকর
প্রাকৃতিক উপাদান, যা ত্বকের জ্বালা কমায় এবং ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। সরাসরি গাছ
থেকে অ্যালোভেরার জেল বের করে আক্রান্ত স্থানে লাগালে আরাম পাওয়া যায়।
নারকেল তেলও ত্বকের জন্য উপকারী, বিশেষ করে অর্গানিক নারকেল তেল ত্বকের
আর্দ্রতা বজায় রাখা এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুনের কারনে এলার্জি প্রদাহ
কামায়। এছাড়া ওটমিল পাওডার দিয়ে গোসল করা একটি কার্যকর এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় । ওটমিল
ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে মসৃণ করে। মধুও একটি প্রাকৃতিক
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান,যা ত্বকের সংক্রমন প্রতিরোধ করে এবং আরাম দেয়।
আক্রান্ত স্থানে অল্প পরিমান মধু লাগিয়ে কিছুক্ষন রেখে ধুয়ে ফেললে চুলকানিও
লালচে ভাব কমতে পারে।
তুলসী পাতা বা নিমপাতার বসও ত্বকের জন্য কার্যকর , কারন এগুলোতে
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুন রয়েছে। আক্রান্ত স্থানে পাতার রস লাগালে এলার্জি কমে
যায়। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করা, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খাওয়া এলার্জি
সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। এই সব ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে ত্বকের
এলার্জি দূর হবে খুব সহজেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যদি ত্বকের এলার্জি
দীর্ঘস্থায়ী হয় বা সংক্রান্ত ছড়িয়ে পড়ে, তবে অবশ্যি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
দরকার।
ঠান্ডা এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
ঠান্ডা এলার্জি অনেকের জন্যই বিরক্তিকর ও অস্বস্তিকর একটি সমস্যা, বিশেষ করে
শীতের মৌসিমে বা ঠান্ডা পরিবেশে। এ ধরনের এলার্জিতে হাঁচি,নাক বন্ধ, কাশি, শরীর
কাঁপা, শ্বাসকষ্ট বা ত্বকে চুলকানি হতে পারে। তবে কিছু সহজ ঘরোয়া উপায়ে ঠান্ডা
এলার্জি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। প্রথমেই শরীর গরম রাখা জরুরি। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে
গরম কাপড়, মোজা, টুপি ব্যবহার করা উচিত। আদা ঠান্ডা এলার্জি দূর অ্যান্টি-
ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট গুন রয়েছে। এক কাপ গরম আদার চা প্রতিদিন
পান করলে শ্বাসযন্ত্র স্বস্তি পায় এবং হাঁচি কাশি কমে যায়। এছাড়া মধু প্রাকৃতিক
অ্যান্টিবায়োটিক হিসাবে কাজ করে।
প্রতিদিন একচামচ কাঁচা মধু খাওয়া বা গরম পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। রাতের ঘুমানোর আগে গরম দুধে সামান্য হলুদ মিশয়ে খেলে
শরীর ভেতর থেকে গরম থাকে। রসুন ও ঠান্ডা অ্যালার্জি কমাতে কার্যকর আবার এতে
রয়েছে অ্যালিসিন বা অ্যান্টিভাইরাস ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া গুনসম্পন্ন। রান্নায়
নিয়মিত রসুন ব্যবহার বা কাঁচা রসুন খাওয়া অনেক উপকার দেয়। এছাড়াও বাষ্প নেওয়াও
একটি ভালো উপায়। লেবু ও ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা শক্তিশালী হয়, ফলে ঠান্ডা এলার্জি সহজে আক্রান্ত করতে পারে না। এসব
ঘরোয়া উপায় নিয়মিত মেনে চললে ঠান্ডা এলার্জি অনেকটাই কমে যায় এবং শরীর সুস্থ ও
সতেজ থাকে।
কালোজিরা ও মধু মিশ্রণ এলার্জি প্রতিরোধ
কালোজিরা ও মধু প্রাচীনকাল থেকেই প্রাকৃতিক ভেষজ চিকিৎসার অমূল্য উপাদান হিসাবে
ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিশেষ করে এলার্জি প্রতিরোধ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
এদের কার্যকারিতে অন্যান্য। কালোজিরাকে আয়ুর্বেদে সব রোগের ঔষধ বলা হয়। এতে
বিদ্যমান থাইমোকুইনন নামক উপাদান দেহের প্রদাহ কমাতে, শ্বাসকষ্ট দূর করতে এবং
ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মধু প্রাকৃতিক অ্যান্টি
অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ভরপুর, যা শরীরকে ক্ষতিকর
জীবানু ও সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
কালোজিরা ও মধুর মিশ্রণ প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চামচ গ্রহণ করলে এলার্জি
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি বিশেষ ভাবে ঠান্ডা, ধুলাবালি, কারনে
হাঁচি-কাশি ও চুলকানি পেওতিরোধে সহায়ক। এ মিশ্রণ শরীরে জমে থাকা টক্সিন বের করে
দিয়ে রক্তকে বিশুদ্ধ করে ,ফলে ত্বকের এলার্জি বা ফুসকুড়ির সমস্যাও কমে আসে।অনেক
সময় এলার্জির কারণে নাক বন্ধ হওয়া, চোখ চুলকানো বা গলা শুকিয়ে যাওয়া দেখা
দেয়।
নিয়মিত কালোজিরা -মধুর সেবনে এ ধনের উপর্সগ ধীরে ধীরে কমে যায়। এছাড়া এটি
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে এলার্জি হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। তবে মধু ও
কালোজিরা সঠিক পরিমান বজায় রাখা জরুরি-- অতিরিক্ত সেবন করলে হজমের সমস্যা হতে
পারে। প্রতিদিন আধা চা চামচ কালোজিরার গুরা এক চামচ খাঁটি মধুর সাথে মিশিয়ে
খাওয়া সবচেয়ে বেশি কার্যকর উপায়। এইসব ঘরোয়া উপায় যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে
আপনার এলার্জি অনেকটা কমে যাবে।
মৌসুমি এলার্জি মোকাবেলার ঘরোয়া উপায় কি?
মৌসুমি এলার্জি সাধারণত আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে বসন্ত
ও শীতকালে যখন বাতাসে ধূলা, পরাগকণা পরিমান বেড়ে যায়। এ সময় অনেকের হাঁচি কাশি
নাক দিয়ে পানি পড়া চোখ চুলকানো কিংবা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। এ
সমস্যা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় বেশ কার্যকর হতে পারে। যেমন- নিয়মিত গরম
পানি বা ভাপ নেওয়া শ্বাসনালীপরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে
গার্গল করলে গলা ব্যথা ও কাশি কমে যায়। কালোজিরা ও মধু মিশিয়ে খেলে শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং এলার্জির প্রভাব হ্রাস পায়।
এ ছাড়া চুলসী পাতা , আদা বা হলুদের চা নিয়মিত পান করলে শরীরকে উষ্ণ রাখে ও
প্রদাহ কমায়। নাক বন্ধ বা হাঁচির সমস্যা বেশি হলে স্যালাইন চাদর নিয়মিত ধোয়া ও
পরিষ্কার পরিবেশে বজায় রাখা জরুরি। পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি
পান করাও মৌসুমি এলার্জি প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা রাখে। তাই প্রাকৃতিক ও সহজ এই
ঘরোয়া উপায়গুলো মেনে চললে মৌসুমি এলার্জির কষ্ট অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে ভেষজ তেলের ব্যবহার
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায়ে ভেষজ তেলের ব্যবহার একটি প্রাচীন ও কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি,
যা প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ পতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং অস্থস্তিকর উপসর্গ কমাতে
সাহায্য করে। মৌসুমি বা ধুলাজনিত এলার্জিতে অনেকেই হাঁচি, নাক বন্ধ, মাথা ব্যথা
কিংবা ত্বকে চুলকানির মতো সমস্যায় ভোগেন। এসব ক্ষেত্রে ভেষজ তেল যেমন
ইউক্যালিপটাস অয়েল,পিপারমিন্ট অয়েল, টি ট্রি অয়েল, কালোজিরা তেল এবং নারকেল তেল
বেশ উপকারী বিসাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরন স্বরূপ, ইউক্যালিপটাস তেলের ভাপ নিলে
শ্বাসনালী পরিষ্কার হয় এবং নাক বন্ধ কমে যায়।
পিপারমিন্ট তেলে উপস্থিত মেনথন শীতলতা এলে হাঁসি ও শ্বাসকষ্টে আরাম দেয়। আবার
ল্যাভেন্ডার তেল প্রদাহ কমাতে ও শরীরকে মিথিল কমাতে সাহায্য করে, যা এলার্জির
কারণে ঘন ঘন অস্বস্তি কমায়। ভেষজ তেল ব্যবহারের সময় কয়েক ফোঁটা তেল গরম পানিতে
দিয়ে ভাপ নেওয়া, ত্বকে মিশ্রিত আকারে লাগানো কিংবা রুমে ডিফিউজার ব্যবহার করার
মাধ্যমে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে সরাসরি ঘন আকারে ত্বকে ব্যবহার না করে সবসময়
নারকেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা উচিত, নাহলে উল্টো ত্বকের
জ্বালা হতে পারে।
ঘরের পরিবেশ বিশুদ্ধ রাখতে ডিফিউজার বা বাষ্পে ভেষজ তেল ব্যবহার করলে বাতাসে
থাকা জীবাণু ও এলার্জি সৃষ্টিকারী উপাদানও কমে যায়। নিয়মিত ও সঠিকভাবে ভেষজ তেল
ব্যবহার করলে শুধু এলার্জি নয় , বরং মানসিক প্রশান্তি ও শারীরিক রোগ প্রতিরোধেও
তা কার্যকর ভূমিকা রাখা। তাই প্রাকৃতিক ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই উপায়গুলো
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে একটি নিরাপদ ও সহজ সমাধান হতে পারে। নিয়মিত এলার্জি
নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া ব্যহার করলে এলার্জি থেকে মুক্তি পাওয়া
যাবে।
ঘরোয়া উপায়ে চোখের এলার্জি দূর করার উপায়
চোখের এলার্জি একটি সাধারণ সমস্যা যা মূলত ধূলা, ধোঁয়া, পরাগকণা, পোষা প্রানীয়
লোম কিংবা মৌসুমি পরিবর্তনের কারনে হয়ে থাকে। এতে চোখ লাল হওয়া , চুলকানি, পানি
পড়া ও জ্বালাপোড়া করার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ঘরোয়া কিছু উপায় মেনে চললে চোখের
এই অস্বস্তি অনেকটাই কমানো সম্ভব। প্রথমে পরিষ্কার -পরিচ্ছন্নতার দিকে মনোযোগ
দেওয়া জরুরি। বাইরে থেকে আসার পর ঠান্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে ফেললে ধূলা ও এলার্জির
উপাদান অনেকটাই দূর হয়।
চা ব্যাগ বিশেষ করে গ্রিন টি বা ব্ল্যাক টি ঠান্ডা করে কয়েক মিনিট চোখের উপর
রাখলে প্রদাহ ও ফোলা কমে যায়। এছাড়া শসার টুকরা বা গোলাপজলের তুলা চোখে দিলে
শীতলতা আসে, এবং চুলকানি কমে যায়। অনেক সময় চোখের শুষ্কতা এলার্জিকে বাড়িয়ে
তোলে,সেই ক্ষেতে প্রাকৃতিকভাবে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবগ চোখে বারবার হাত না
দেওয়া খুবই জরুরি। ঘর ধুলো-ময়লা মুক্ত রাখা , বালিশের কভার ও চাদর নিয়মিত
পরিষ্কার করাও গুরুত্বপূর্ন,কারণ এগুলোতে ধূলা ও জীবাণু জমে চোখে এলার্জি
সৃষ্টি করতে পারে।
যদি চোখে অতিরিক্ত লাল্ভাব বা জ্বলা দেখা দেয়, তবে অল্প লবন মিশ্রিত গরম পানির
সেঁক দেওয়া যেতে পারে , যা জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে। অনেকে অ্যালোভেরা
জেলের ঠান্ডা ভাব চোখের অস্বস্তি কমাতে ব্যবহার করেন, তবে অবশ্যি পরিশুদ্ধ ও
পরিষ্কার হতে হবে। বাহিরে বের হলে রোদ ও ধুলাবালি থেকে বাঁচতে সানগ্লাস ব্যবহার
করা উচিত। এইসব ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে চোখের এলার্জি কমতে শুরু করবে।
লেখকের শেষ কিছু কথা এলার্জি নিয়ে
এলার্জি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় অনেক সমস্যা দূর করতে সাহায্য
করে থাকে। এলার্জি একটি সাধারন কিন্তু বিরক্তিকর স্বাস্থ্যসমস্যা, যা যেকোনো
বয়সের মানুষের জীবন যাত্রেয় প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক সময় আমরা এটিকে তুচ্ছ ভেবে
অবহেলা করি কিন্তু সঠিক যন্ত্র না নিলে তা দীর্ঘমেয়াদি কষ্টের কারন হতে পারে।
ঘরোয়া উপায়ে স্বাস্থকর জীবনধারা ও পরিষ্কার- পরিচ্ছিন্নতা মেনে চললে
এলার্জি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
আরো পড়ুনঃ নিম পাতার রস খাওয়ার উপকারিতা
সবশেষ বলা যায়, সচেতনতা , ধৈর্য ও সঠিক যন্ত্রেই এলার্জি নিয়ন্ত্রের মূল
চাবিকাঠি।এলার্জি কেনো হয় এবং এলার্জির দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে আলোচলা করা
হয়েছে উপরে। আশা করি আপনি আমাদের এই আর্টিকেল থেকে সবকিছু জানতে পারছেন। এতক্ষন
আমাদের আর্টিকেলের সাথে থাকার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই ধরনের
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যমুলক আর্টিকেল পরতে চাইলে আমাদের সাথে থাকুন।
ট্রিক্সমিয়া নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url